ইতোপূর্বে সাইক্লিং নিয়ে পিপীলিকায় বেশ কিছু লেখা পাবলিশ করা হয়েছে এবং প্রতিটি লেখাই আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছে। যার ফলে একই বিষয়ের উপর আরও নতুন এবং তথ্য নির্ভর লেখা দেয়ার আগ্রহ জেগেছে। সাইক্লিং বিষয় আমাদের এবারের পোস্ট থাকবে যারা নতুন সাইক্লিং শুরু করেছেন কিংবা করবেন অথবা যারা এখনো এ বিষয়ে অনেক কিছু সম্পর্কে অজ্ঞ আছেন। সঠিকভাবে বোঝানোর স্বার্থে লেখা দীর্ঘায়িত করা হয়েছে।
নতুন সাইক্লিস্টদের জন্যে অবশ্যপালনীয় কিছু বিষয় -
১.প্রথম কাজ সাইকেল চালানো শিখে নেয়া। চেনা পরিচিত কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে শিখতে পারেন নতুবা বিডিসাইক্লিস্টস এর বিগেনার লেসন এ অংশগ্রহণ করে সাইকেল চালানো এবং সাধারণ ধারণাগুলো নিয়ে নিতে পারেন। নতুন সাইক্লিং শুরু করে তাদের অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেনা আর সব কিছুর মতো সাইক্লিং এও যথেষ্ট রিস্ক রয়েছে। সাইকেলের সাথে সম্পূর্ণভাবে মানিয়ে না নেয়া পর্যন্ত পাগলামো করে খুব বেশি গতিতে কিংবা স্টান্ট করার চেষ্টা করা মারাত্মক ফলাফল এনে দিতে পারে। সাবধান থাকতে হবে। নিজের সাইকেলকে বোঝার জন্যে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
২.ঢাকার রাস্তায় সাইক্লিং করা অনেকটাই দুঃস্বপ্নের মতো। আপনি যদি সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকেন তারপরেও অন্যান্য ড্রাইভারদের অসাবধানতা-বসত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ ব্যবহার করতে হবে।
৩.নতুন নতুন সাইকেল চালানো শুরু করলে চারপাশে সব কিছুর সাথেই রেস করতে মন চাইবে, আর সেটাই স্বাভাবিক। পাখির ডানা গজালে নিশ্চয়ই পাখির বসে থাকতে ইচ্ছে করে না, দুই পাশে পাখা পেলে উড়তে ইচ্ছে করে। ঠিক তেমনই নতুন সাইকেল চালানো শিখলে খুব বেশি স্পিডে চালানো আর রেস করার প্রবণতা দেখা দেয়। নিজের এই ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে হবে। চাইলেও এই ইচ্ছা বাস্তবে রূপান্তর করা যাবেনা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এমন করে দুইবার অ্যাকসিডেন্ট করেছি।
৪.নতুন নতুন সাইক্লিং শুরু করলে শরীরের মাসলগুলোর জন্যে কিছুদিন সময় দরকার সেগুলো ফ্রি হওয়ার জন্যে। নিয়মিত জগিং, সাঁতার কিংবা জিম করলে সেক্ষেত্রে কথা ভিন্ন। কিন্তু সাধারণ কারো জন্যে নিজের শরীরের মাসলগুলোকে ফ্রি হয়ে নেওয়ার মতো সময় দিতে হবে। একদিন দুইদিনেই মাসল ফ্রি হয়ে যাবেনা। তাই প্রথমেই বড় বড় রাইড দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সাবলীলভাবে সাইকেল চালাতে হবে।
৫.দীর্ঘদিন সাইক্লিং করলে মস্তিষ্কের সাথে শরীর মানিয়ে নিতে পারে, ফলে যেকোনো চূড়ান্ত মুহূর্তে কি করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে সেটা ঠিক করে নিতে পারে। কিন্তু প্রথম দিকে শরীর এবং মস্তিষ্কের সমন্বয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন রকমের হয়। অনেক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে ওঠে না। তাই নিজেকে সাইক্লিং এ যথেষ্ট সময় দিতে হবে এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করতে হবে যাতে করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যেকোনো রকম দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
সাইকেল
ইতোমধ্যেই সাইকেল কিনে না ফেললে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাটা নিতান্তই স্বাভাবিক। চারিদিকে হরেক রকম সাইকেলের বাহার। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ সেটা তার গুণ দিয়ে না সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করবে যার সাইকেল সম্বন্ধে তেমন ধারণা নেই। দামী সাইকেলগুলো দেখে মনে হতেই পারে এগুলোর মধ্যে এমন কি আছে !
যদি ইতোমধ্যেই সাইকেল না কিনে থাকেন তাহলে আগে জানার চেষ্টা করুন কোন সাইকেল ভালো এবং কেন ভালো। বিডিসাইক্লিস্ট এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে চাইলে আপনার বাজেট উচ্চতা এবং চাহিদা জানিয়ে পোস্ট করতে পারেন। আশানুরূপ মতামত পেলে সিদ্ধান্ত নিন।
বাজেট সমস্যা না থাকলে কম দামী সাইকেল না কেনাই ভালো। যেসকল কারণে কমদামী সাইকেল কিনবেন না শিরোনামে আমাদের একটি পোস্ট আছে। সেটা পড়ে নিতে পারেন। তাহলে কম দামী সাইকেলগুলো না কেনার পিছের কারণগুলো জেনে নিতে পারবেন।
সাইক্লিস্ট এর জন্যে আবশ্যিক জিনিসগুলো
সাইক্লিং এর জন্যে সাইকেলতো আবশ্যিক জিনিস, এরপরেও আরও কিছু আবশ্যিক জিনিস আছে যেগুলো একজন সাইক্লিস্ট হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে। আবশ্যিক জিনিসগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া হলো।
সাইক্লিং এর শুরুতে যেগুলো অবশ্যই দরকার
১.হেলমেট – সাইকেল আরোহীদের জন্যে হেলমেট অত্যাবশ্যক। মাথার যেকোনো আঘাত এড়ানোর জন্যে হেলমেট পড়তেই হবে। অনেকেই হয়তো লজ্জায় সাইকেলের সাথে হেলমেট যায়না ভেবে হেলমেট পড়াটা এড়িয়ে যান, আবার অনেকের ধারণা যে দুর্ঘটনার সময় সাইকেলের হেলমেট নিরাপত্তার জন্যে কোন ভূমিকাই রাখেনা, যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বেশির ভাগ মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে দারুণভাবে বাঁচিয়ে দিবে হেলমেট। দুর্ঘটনায় মাথা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগলে বা মাটিতে পড়ে গেলে সেটা সরাসরি মাথায় না লেগে হেলমেটে লাগবে, যার ফলে মাথা ফাটা বা তার চেয়েও মারাত্মক কিছু এড়ানো যাবে। তবে সাধারণ হেলমেট না কিনে কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও ব্র্যান্ডের হেলমেট কেনা উচিৎ। অবশ্যই সামান্য কিছু টাকার চেয়ে আমার নিরাপত্তাটা বেশি জরুরী। হেলমেট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন মাথার মাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং পরিপূর্ণভাবে ফিট হয়।
২.লক – দেশে সাম্প্রতিককালে সাইকেল চুরির ঘটনা অহরহ ঘটছে। বাড়ির গ্যারেজ থেকেও সাইকেল চুরি যেতে পারে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভালো লক দরকার। অনেক চাইনিজ লক পাওয়া যায় যেগুলো প্রফেশনাল সাইকেল চোরের কাছে খুলে ফেলা কোন কঠিন কাজ নয়। তাই নিজে ভালো মানের ছিকল কিনে, আনকমন বিদেশী তালা ব্যবহার করে সাইকেল লক করতে পারেন।
৩.পাম্পার – ভালো মানের সাইকেলে যদিও নিয়মিত পাম্প দেয়ার দরকার পরে না তবুও সাইকেল থাকলে পাম্পার সাথে রাখতেই হবে। মোটামোটি মানের একটা পাম্পার এর দাম খুব একটা বেশি না।
৪.বেল – অলি গলিতে চলাচল করতে গেলে আর রাস্তায় অন্য ড্রাইভারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে সাইকেল এর সাথে বেল থাকাটা আবশ্যিক।
৫.প্যাচ কিট – যেকোনো সময় সাইকেল এর টিউব লিক হয়ে যাওয়া কিংবা ফেটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে প্যাচ কিট সাথে থাকলে নিজেই যেকোনো সময় সাড়িয়ে নেয়া সম্ভব।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যেগুলো কিনে নিতে পারেন (ঐচ্ছিক)
১.গ্লভস – যেকোনো বাইক দুর্ঘটনায় হাত, মাথা হাঁটু, কনুই এগুলোই সাধারণত আগে মাটিতে হিট করে, তাই এই জায়গাগুলোতেই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে পড়ে গেলে বা অন্য কোন কিছু হলে হাত মাটিতে পড়ে তালুর চামড়া ছড়ে যেতে পারে যা মারাত্মক কষ্টের, পাশাপাশি তা সেরে উঠতেও বেশ সময় নেয়। এছাড়া অন্য কোন ক্ষতিও হতে পারে। ভালো মানের গ্লভস সাইকেল আরোহীর হাতকে দারুণ ভাবে নিরাপদ রাখতে পারবে। ভালো গ্লভস আরোহীকে আরামদায়ক ও ভালো গ্রিপ দেওয়ার পাশাপাশি হাতকেও নিরাপদ রাখছে তাই সাইকেল আরোহীদের জন্যে গ্লভস ও অত্যাবশ্যক।
২.লাইট – সামনে ও পিছে ব্যবহার করার জন্যে লাইট কিনে নিতে পারেন যদি নাইট রাইডে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে। ফ্রন্ট ও টেল লাইট ছাড়া কখনোই রাতের রাস্তায় সাইক্লিং করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
৩.প্যাডেড শর্টস – নিয়মিত সাইক্লিং করলে সিট পোস্টের কারণে জায়গা মতো (
) ব্যথা হতেই পারে। তাই প্যাডেড শর্টস থাকাটা জরুরী।
৪.বাইক কম্পিউটার – স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হলে এণ্ডোমোন্ডোর মতো স্পোর্টস ট্র্যাকার দিয়ে সহজেই ট্র্যাক করতে পারবেন আপনার মোট দূরত্ব, সর্বোচ্চ স্পিড, এভারেজ স্পিড ইত্যাদি। কিন্তু যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্যে বাইক কম্পিউটার সেই আশা পূরণ করবে।
৫. হাইড্রেশন প্যাক – সাইক্লিং করলে প্রচুর পরিমাণে তরল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তাই প্রচুর পানি পান করে শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে বাঁচাতে হয়। সেক্ষেত্রে হাইড্রেশন প্যাক থাকাটা জরুরী।
এছাড়া শখের জন্যে আরও অনেক কিছুই কিনে নিতে পারেন, যেমন ভালো জুতো, ড্রেস, সাইকেল র্যাক ইত্যাদি।
শেষ কথা
লেখা সম্পর্কে ভালোলাগা মন্দ লাগা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না আর কোন বিষয়ের উপর লেখা চাইলে সেটাও জানাতে পারেন আমরা যতদ্রুত সম্ভব সেই বিষয়ে নতুন লেখা তৈরি করে ফেলবো।