সাইক্লিস্ট হিসেবে যে সকল কারণে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে…

ট্রাফিক লাইট
সম্ভবত ঈদের দিনই একমাত্র দিন যেদিন ঢাকা শহরে কোন জ্যাম থাকেনা। হরতালের যা অবস্থা, ইদানিং হরতালেও দেদারসে গাড়ি নামে রাস্তায় আর জ্যাম থাকে। ঢাকা শহরে জ্যাম নিরসনের অন্যতম বাহন সাইকেল। একদিকে যেমন শারিরীক ও মানসিক উন্নতি, আরেকদিকে জ্যাম নিরসনে সহায়তা করে দেশেরও উন্নতি হচ্ছে। তবে আমাদের মধ্যে অনেককেই পাওয়া যাবে যারা ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করেন না। হোণ্ডাচালকদের ট্রাফিক আইন অমান্য করার রীতি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ইদানিং সাইক্লিস্টদের মধ্যেও ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। লাল বাতি থাকার পরেও দেখা যায় অনেকে দেদারসে সাইকেল টানছেন… সাইক্লিং বিষয়ক লেখার এ পর্বে তুলে ধরা হবে সাইক্লিস্ট হিসেবে যে সকল কারণে ট্রাফিক্ল আইন মেনে চলতে হবে।

দূর্ঘটনা ঘটতে পারে

লাল বাতি দিয়ে যখন কোন রাস্তায় সব গাড়ি থামানো হয় তখন অপর রাস্তায় সবুজ বাতি দিয়ে গাড়ি সচল করা হয়। এ অবস্থায় যদি আপনি আপনার সাইকেল নিয়ে যাওয়া শুরু করেন তাহলে দূর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সমস্ত দোষ কিন্তু আপনার ঘাড়েই বর্তাবে। কারণ অপর পাশে সচল গাড়িগুলো অনুমতি প্রাপ্ত চলার জন্যে, কিন্তু আপনি না। হয়তো দেখা যাবে আপনি কোন গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিলেন কিংবা অন্য কোন গাড়ি সজোড়ে আপনার সাইকেলকে ধাক্কা দিলো। এতে করে একেতো আপনি নিজের ক্ষতি করছেন, হাত পা ভাঙ্গা থেকে শুরু করে এর চেয়েও বড় কিছু ঘটে যেতে পারে। আর আপনার শখের সাইকেলেরও বারোটা বেজে তেরোটা ঝুলে যেতে পারে। মোট কথা ট্রাফিক আইন অমান্য করে সাইকেল চালালো আমও যাবে সাথে ছালাও যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।
সাইকেল দূর্ঘটনা
শুধু লাল বাতিকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সাইক্লিস্টদের ট্রাফিক আইন অমান্য করা সীমাবদ্ধ নেই এখন। মোটরসাইকেল চালকদের অনুসরণে অনেককেই দেখা যায় উল্টোপথে সাইকেল চালিয়ে যেতে। এটা খুবই ভয়ংকর দূর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। হয়তো ৫-১০মিনিট সময় বাঁচাতে উল্টোপথে সাইকেল ঢুকিয়ে চালালেন কিন্তু যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে এই অল্প সময় বাঁচাতে পারলে যে উপকার হতো তারচেয়েও বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
তাই যেকোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলতে আপনার অবশ্যই ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। অন্যথায় ভবলীলা সাঙ্গ হলেও হতে পারে :wink:

বদনাম

এখানে বদনাম বলতে আপনার আমার বদনাম না, পুরো সাইক্লিস্ট কমিউনিটির বদনাম তথা বিডিসাইক্লিস্ট এর বদনাম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ মানুষই জানে যে সিরিয়াস রকম সাইকেল যারা চালায় তাদের একটা দলমতন কিছু আছে। তাই কারো একার দোষ এখন শুধু তার একার উপরেই বর্তাবে না বরং পুরো গ্রুপের উপরেই বর্তাবে। তাই অনুগ্রহপূর্বক ট্রাফিক আইন অমান্য করে পুলিশ ও সাধারণ জনগণের চোখে আমাদের গ্রুপটাকে খারাপ করবেন না।
ট্রাফিক পুলিশের চোখে সাইক্লিস্টরা এখনো যথেষ্ট উচুস্থানে আছে। আমাদের উচিৎ হবেনা নিজের এই অবস্থান খুইয়ে নেয়া। একবার কাটাবনে এক সিগন্যালে আটকে আছি, পাশ থেকেই এক মোটরসাইকেল শো করে চলে গেলো। ট্রাফিক পুলিশ ডেকেও থামাতে পারলেন না। তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, উনাদের অনেক কিছু শিখার আছে আপনাদের কাছ থেকে। আপনার কি সুন্দর হেলমেট মাথায় দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছেন, আবার আইনও মেনে চলছেন। শোনার পর নিঃসন্দেহে গর্বে বুক ভরে উঠছিল। কোনদিন যেন এমন না হয় যে ট্রাফিক পুলিশও আমাদের খারাপ চোখে দেখতে শুরু করে। তাই ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, কমিউনিটিকে বদনাম হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। :)

ভোগান্তি

ট্রাফিক আইন অমান্য করে আপনি হয়তো শান্তিতেই থাকলেন কিন্তু অন্যান্য চালকদের আর মানুষদের হয়তো অনেকবড় ভোগান্তিতে ফেলে দিলেন। যেমন আপনি যদি উল্টোপথে সাইকেল চালানো শুরু করেন তাহলে সে পথে আসা রিকশা, গাড়িসবগুলোকেই আপনাকে সাইড করে দেয়ার জন্যে আলাদা জায়গা করে দিতে হবে। এটা যথেষ্ট ভোগাবে তাদের, তাছাড়া রাস্তা পার হওয়ার সময় সাধারণত চালকরা বা সাধারণ মানুষ উলটোপথ থেকে কোন যানবাহনের চলে আসাটা আশা করে না। তাই ট্রাফিক আইন মেনে চলে মানুষকে অযথা ভোগান্তির হাত থেকে বাঁচান।
অনেকেই সাইকেল চালানোর সময় বার বার লেন পরিবর্তন করেন। এটা কখনোই ঠিক না, নিতান্তই প্রয়োজন না থাকলে বার বার এমনটা করা উচিৎ না। যদি লেন পরিবর্তন করতেই হয় তাহলে অবশ্যই হালকা পেছনে ফিরে দেখে নিবেন কোন গাড়ি আছে কিনা। না থাকলে সাবধানে লেন পরিবর্তন করে ফেলুন। অযথা না দেখে লেন পরিবর্তন করার মাধ্যমে অন্য গাড়িগুলোকে আপনার গতিপথ সম্পর্কে বিভ্রান্ত করে তুলছেন আপনি। এতে করে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি এমন ঘটনার শিকার। তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি নিজের দোষে ভুল করবেন না।

শেষ কথা

ট্রাফিক আইন কেন মেনে চলতে হয় তা সকলেরই জানা, তবুও আরেকটিবার মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে ছোট্ট এই পোস্ট। অন্তুত একজন মানুষকে ট্রাফিক আইন মানতে শিখাতে পারলেও আমার লেখা সার্থক বলে ধরে নিবো। আপনার যদি ট্রাফিক আইন অমান্য করে কোন দূর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে থাকলে কমেন্টে শেয়ার করতে পারেন।
Be Safe !

ডিস্ক ব্রেইক আলাপন – মেকানিকাল আর হাইড্রোলিক এর পার্থক্য

ডিস্ক ব্রেইক
আরোহীকে সর্বোচ্চ ব্রেইকিং এক্সপেরিয়েন্স দিতে আমেরিকার হাই এন্ড মাউন্টেন বাইকগুলোতে প্রথম আবির্ভাব ঘটে ডিস্ক ব্রেইকের। সেই থেকে সাইকেলে ডিস্ক ব্রেইকের যাত্রা শুরু। আর সব সিস্টেম থেকে সাইক্লিস্টদের কাছে ডিস্ক ব্রেইকের গ্রহণযোগ্যতা দিনকে দিন বাড়তে থাকে। চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানী বাণিজ্যিকভাবে ডিস্ক ব্রেইক তৈরী শুরু করে।
বর্তমানে বাজারে যেসকল সাইকেল কিনতে পাওয়া যাচ্ছে তাদের মধ্যে একটা বিরাট অংশের সাইকেলই ডিস্ক ব্রেইক সংবলিত। ক্রেতার চাহিদা এবং মানের উপর ভিত্তি করে বিক্রেতারাও ডিস্ক ব্রেইকসহ সাইকেলগুলোকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। ডিস্ক ব্রেইকের প্রকারভেদ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকাটা একজন সাইক্লিস্ট হিসেবে নিতান্তই দরকারি বিষয়। এ পর্বে ডিস্ক ব্রেইকের প্রকারভেদ এবং কেনার সময় কোন ধরণের ডিস্ক ব্রেইক কেনা উচিৎ তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ডিস্ক ব্রেইক এর প্রকারভেদ

ডিস্ক ব্রেইক সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থেকে থাকলে আপনি হয়তো ইতোমধ্যেই জানেন ডিস্ক ব্রেইক মোট দুই ধরণের। মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক আর হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক। আদতে এগুলো দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও কাজে এবং মানের দিক দিয়ে এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
যাদের এই প্রকারভেদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই তারা প্রথম দেখাতে মেকানিকাল এবং হাইড্রোলিক এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন না। চেষ্টা করবো যাতে দুই ধরণের ব্রেইক সম্পর্কে জটিলতা এড়িয়ে সাধারণ ধারনা দেয়ার।

মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক

মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক
সাধারণ ভি ব্রেইকগুলোতে যে ক্যাবল ব্যবহার করা হয় মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইকেও সেই একই ধরণের ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইকগুলোত ব্রেইক চাপার কারণে ক্যাবল শক্ত হয়ে টান টান হয়ে যায়, ফলে ক্যাবলের সাথে সংযুক্ত প্যাডসগুলো দুই পাশে থেকে রোটর* কে চেপে ধরে। যেহেতু রোটর চাকার সাথে সংযুক্ত থাকে তাই রোটরকে থামানোর সাথে সাথে বাইকের চাকাও থেমে যায়।
*সাধারণত যাকে ডিস্ক বলা হয় সেটাই রোটর

হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক

হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক
সাধারণ ভি ব্রেইক এবং মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক থেকে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক সিস্টেম সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন ব্রেইক লিভার চেপে ধরা হয় তখন প্রেশারের কারণে তেল প্রবাহিত হয়ে ক্যালিপারে চলে যায় এবং প্রবল চাপ সৃষ্টি করে প্যাডসগুলোকে বাধ্য করে রোটরকে প্রচণ্ডভাবে চেপে ধরতে। মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইকের তুলনায় হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক যথেষ্ট শক্তিশালী এবং কার্যক্ষমতা অনেক বেশি।

মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক এবং হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইকের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য:

১.মেকানিকাল সিস্টেমে ক্যাবল ব্যবহার করা হয় ব্রেইক করার জন্যে কিন্তু হাইড্রোলিক সিস্টেমে তেল কিংবা একই জাতীয় তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
২.মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইকের রক্ষণাবেক্ষণ করা তুলনামূলক সহজ হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক থেকে।
৩.কোন কারণে সমস্যা হলে সহজেই ঠিক করে নেওয়া যাবে, ক্যাবল সবখানেই পাওয়া যায় মেকানিকাল ব্রেইকের। কিন্তু ডিস্ক ব্রেইকের কোন সমস্যা হলে ভালো জানাশোনা না থাকলে বংশাল কিংবা গ্রীনরোডেই দৌড়াতে হতে পারে। 
৪.যারা অল্প দামের মধ্যে ডিস্ক ব্রেইকের স্বাদ নিতে চান তারা খুব কম দামেই পেয়ে যাবে মেকানিকালটা। কিন্তু যদি হাইড্রোলিক নিতে চান তাহলে বেশ ভালো পরিমাণের টাকা গুণতে হবে ভালো মানের হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক নিতে। 
৫.মেকানিকাল ব্রেইক ফিটিং করা তূলনামূলক সহজ হাইড্রোলিক ব্রেইক থেকে। হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক সবাই ফিটিং করতে পারেনা, তাই অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে লাগিয়ে নেয়াটাই ভালো। ঠিকমতো ফিটিং না হলে মারাত্মক দূর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই ফিটিং করার পর চেক করে নিতে হবে।
৬.মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক কিছুদিন পরপরই টিউন করতে হবে। হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইকের ক্ষেত্রে তেমন কিছুর প্রয়োজনীয়তা পড়বেনা হরহামেশাই।
৭.ক্ষমতার দিক থেকে যাচাই করলে মেকানিকাল থেকে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক ওগিয়ে থাকবে। হাইড্রোলিক ব্রেইক খুবই শক্তিশালী, পিচ্ছিল মাটি কিংবা কাঁদার মধ্যেও অনায়াসে চাকা থামিয়ে দিতে সক্ষম 
৮.হাইড্রোলিক ব্রেইকে বছরে অন্তত একবার তেল বস লিকুইড রিফিল করতে হয়, কিন্তু মেকানিকাল ব্রেইক যেহেতু ক্যাবলে কাজ করে তাই এর জন্যে এমন কোন ঝামেলা নেই।
৯. হাইড্রোলিক ব্রেইকে টিউব লিক করে তেল বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইকে তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।
১০.মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেইক থেকে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইকের লিভার পুল করা যথেষ্ট আরামদায়ক।
এই ছিলো মেকানিকাল আর হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেইক সম্পর্কে আমার কিছু সীমিত জ্ঞান। আমার লেখায় ভুল থাকা অস্বভাবিক নয়। কোন অংশে ভুল থাকলে কিংবা ভ্রান্ত তথ্য থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আপনার মতামত স্বাদরে গৃহীত হবে।

গরমে সাইক্লিং করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে

ভরদুপুরে সাইকেল চালাচ্ছেন, মাথার উপরে সূয্যিমামা প্রতি মূহূর্তে আপনার থেকে পানি শুষে নিচ্ছে, আপনি ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, এই মূহুর্তে আপনার গন্তব্যে পৌছাতে পারলেই যেনো হাফ ছেড়ে বাচেন ! নিয়মিত সাইক্লিং করে থাকলে ইতোমধ্যেই নিঃসন্দেহে এমন কোন অভিজ্ঞতা আছে আপনার। প্রচণ্ড গরমে সাইক্লিং দুর্বিষহ এক ব্যাপার। মনোবল দৃঢ় না থাকলে খুব কম সাইক্লিস্টই এই অসহ্য গরমে নিয়মিত সাইকেল চালাতে সক্ষম। গরমে সাইক্লিং করার প্রধাণ সমস্যা খুব দ্রুত পানিশূণ্যতায় ভোগা। পর্যাপ্ত পানি না থাকলে শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে এই গরমেও নিয়মিত সাইক্লিং করা সহজ হয়ে যাবে। সাইক্লিং বিষয়ক লেখার এ পর্বে এমনই কিছু বিষয় তুলে ধরা হবে।
গরমে সাইক্লিং

পর্যাপ্ত পানি পান

গরমে সাইক্লিং করলে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর এর জন্যে আপনার নিজেকেই পানি বহন করে নিতে হবে। সাইকেল চালানোর মাঝে মাঝে যখনই প্রয়োজন মনে করবেন খানিকটা পানি শরীরে চালান করে দিবেন। এতে করে শরীর পর্যাপ্ত পানি পাবে আর সে অনুযায়ী আপনাকে সার্ভিস দিবে :P । আপনি চাইলে পানি রাখার জন্যে বোতল কিংবা হাইড্রেশন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। বোতলের তুলনায় হাইড্রেশন প্যাক ব্যবহার করলে খানিকটা বেশি সুবিধা পাবেন।
চেষ্টা করবেন প্রতি পনেরো মিনিটে ৩-৪ আউন্স পানি খেয়ে নেয়ার, আর ঘন্টায় গড়ে ১৫-১৬ আউন্স পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে বয়েস, ওজন আর তাপমাত্রায় ভিত্তিতে পানির পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।

পাতলা কাপড় পড়া

অত্যধিক গরমে গাড় রঙের কাপড় এড়িয়ে হালকা রঙের পাতলা কাপড় পড়াটাই বেশি আরামদায়ক। কালো বা অন্য গাড় রঙের কাপড় তুলনামূলক বেশি তাপ শোষণ করে আপনার শরীরে গরমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে। যার ফলাফল হিসেবে আপনি আরো বেশি ঘামবেন এবং দ্রুতই দূর্বল হয়ে পড়বেন। তাই গরমে হালকা রঙের পাতলা কাপড় পড়াটাই সুবিধাজনক। এক্ষেত্রে কেউ যদি মনে করেন পাতলা হালকা রঙের কাপড় পড়লে তথাকথিত “ভাব” বজায় থাকবেনা তারা চাইলে সাদা বা অন্য হালকা রঙের মধ্যে ভালো ব্র্যান্ডের টিশার্ট পড়তে পারেন :D । আর গরমের মধ্যে ফুল প্যান্ট এর চেয়ে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পড়াটা আরামদায়ক হবে।

বিশ্রাম নেয়া

রোদের মধ্যে সাইকেল চালানোর সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার প্রয়োজন আছে। তাই যখনই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন তখনই আশেপাশের কোন স্থানে যেখানে ছায়া আছে সেখানে দাঁড়িয়ে বা ছায়াযুক্ত স্থানে বসে বিশ্রাম নিয়ে নিন। মাত্র পাঁচ দশ মিনিটের ছোট্ট বিশ্রাম হয়তো আপনাকে পুনরায় আগের মতো ফুরফুরা করে দিবে, যাতে আপনি আরামে আরো বেশ অনেক কিলো সাইক্লিং করতে পারবেন। আশেপাশে গাছ থাকলে সেখানেও বিশ্রাম নিতে পারেন, আর এটাই সবচেয়ে বেশি উপকারী।

ভারী বোঝা বহন না করা

সম্ভব হলে ভারী বোঝা বহন না করাই ভালো। আপনি স্বাভাবিকভাবে সাইক্লিং করলে যতটুকু চালাতে পারবেন ভারী কিছু বহন করে নিলে তার থেকে অনেক কম দূরত্ব চালাতে পারবেন। তাই সম্ভব হলে ভারী কিছু বয়ে নেয়া থেকে বিরত থাকুন যদি নিতান্তই প্রয়োজনীয় কিছু না হয়ে থাকে।

তাড়াহুড়ো না করা

শুধু গরমেই না যেকোনো সময়েই ব্যস্ত সড়কে তাড়াহুড়ো করে সাইকেল চালানো বেশ বিপদজনক। গতকাল মৌচাক অভারব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দূর থেকে একজনকে দেখলাম অন্য একটা সাইকেল কে পেছনের ফেলার জন্যে উনি রীতিমত যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসেছেন। বিপদজ্জনকভাবে গাড়ি, বাসকে পাশ কাটিয়ে উনি এগিয়ে গেলেন। এক্ষেত্রে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিলো। আর যদি এমন কিছু ঘটতোও তাহলেও সম্পূর্ণ দোষ ঐ সাইক্লিস্ট এর উপরেই বর্তাতো। উনি তাড়াহুড়ো না করে ধীরে-সুস্থে চালিয়ে গেলেই পারতেন। উনার মতো অনেককেই পাওয়া যাবে তাড়াহূড়ো করে কোন বাস, সিএনজি কিংবা অন্য সাইকেলের সাথে পাল্লা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোন একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে একজনের কারণে পুরো কমিউনিটির উপরেই দোষ বর্তাবে, কারণ আমরা সাইক্লিস্টরা প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে বিডিসাইক্লিস্টস কে রিপ্রেজেন্ট করি।
গরমের সময় শরীর এমনিতেই দূর্বল থাকে, এমতাবস্থায় তাড়াহূড়ো করলে বিপদের আশঙ্কা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। তাই সবার প্রতিই অনুরোধ থাকলো তাড়াহুড়ো না করে ভালোভাবে চালিয়ে যান। :)

শর্টকাট অনুসরণ করা

ধরা যাক আপনি দূরের কোন গন্তব্যে যাচ্ছেন। যদি কোন শর্টকাট থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করুন। যদি আপনার গন্তব্যে পৌছানোই মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে যত কম দূরত্ব অতিক্রম করে আপনি সেখানে পৌছুতে পারেন ততোই আপনার জন্যে ভালো।

সানসস্ক্রিম ব্যবহার করা

রোদে পোড়া সাইক্লিস্ট
যদি এমন হয় নিয়মিত সাইক্লিং করার কারণে প্রতিদিন ঘষে মেজে সুন্দর করা চেহারাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রোদে পুরে, তাহলে আপনি সানস্ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। সানসক্রিম আপনার চেহারাকে রোদে পুরে ডিসকালার হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। সাইক্লিং করার কারণে বউ পাবেন না, তা হবে না তা হবেনা ! :wink:

গ্লভস ব্যবহার করা

হাত কম বেশি সবারই ঘামে, তবে অনেকেরই হাত মাত্রাতিরিক্ত ঘামে। ঘর্মাক্ত হাতে হ্যান্ডেলবার ধরলে তা পিচ্ছিল হয়ে যেতে পারে, যা কিনা কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে সক্ষম। তাই সবসময় হাতে গ্লভস ব্যবহার করা উচিৎ, এতে করে আপনি যেমন কোন দূর্ঘটনায় হাত ছড়ে যাওয়া থেকে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন, ঠিক একইভাবে ঘর্মাক্ত পিচ্ছিল হ্যান্ডেলবার পাওয়া থেকেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন । গ্লভস কেনো ব্যবহার করবেন তার জন্যে নিরাপদ সাইক্লিং বিষয়ক আর্টিকেলটি দেখতে পারেন।

রুমাল বা তোয়ালে ব্যবহার করা

এই সময়ে সাইক্লিং করলে অতিমাত্রায় ঘেমে যাওয়া স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আপনি ঘাম মোছার জন্যে নিজের কাছে রুমাল বা মাঝারি আকারের তোয়ালে সাথে রাখতে পারেন। যখনই আপনি খানিকটা সময়ের জন্যে থামছেন তখন চাইলে শরীরের ঘামটা মুছে নিতে পারেন। এতে করে আপনি আগের থেকেও ফ্রেশ অনুভব করবেন।

পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা

খাবার
গরমে নিয়মিত সাইক্লিং করলে আপনার প্রচুর শক্তির প্রয়োজন পড়বে। আর সেই শক্তির যোগান দিতে হবে আপনাকেই। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে মৌসুমী ফলমূল আর শাক-সবজি খান। এতে আপনি পর্যাপ্ত শক্তি পাবেন যা পরবর্তীতে সাইকেল চালানোর সময় কাজে আসবে।
তো এই ছিলো গরমে সাইক্লিং করার কিছু টিপস। নিতান্তই নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে লেখা। তাই অসাবধানতাবসত ভুল-ভ্রান্তি রয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাতে পারেন।
গরমে সাইক্লিং করার সময় আপনার কোন অভিজ্ঞতা কমেন্টে শেয়ার করতে পারেন। আমি জানতে আগ্রহী। :mrgreen:

যেসকল কারণে কমদামী সাইকেল কিনবেন না

সাইক্লিং

সাইক্লিং আমাদের দেশে বর্তমানে একটা ক্রেজ, শুধু আমাদের দেশেই না সমগ্র বিশ্বেই এখন সাইকেল ক্রেজ চলছে। গত কয়েকবছরে নিয়মিত হারে আমাদের দেশে সাইক্লিস্ট বাড়ছে যার পিছনে বিডিসাইক্লিস্ট গ্রুপটি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। অন্যান্য অনেক দেশেই সাইক্লিং এর জন্যে রাস্তায় আলাদা লেন করে দেয়া হয়েছে এবং রাস্তা-ঘাট খানা-খন্দর মুক্ত হওয়ায় সাইক্লিং এর জন্যে বেশ উপযুক্ত। ঢাকার রাস্তায় নিয়মিত সাইকেল চালানো অনেকটাই দুঃস্বপ্নের মতো। এখানে ট্রাফিক আইন মানার কোন বালাই নেই, প্রশিক্ষিত ড্রাইভার নেই তার উপর রাস্তা ঘাট এর বেহাল দশা। তাই স্বাভাবিকভাবেই যারা নিয়মিত বাইক রাইডিং করেন তাদের দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা বজায় রাখা উচিত।
সাইকেল চালানোর সময় নিরাপত্তা কেন জরুরী:
আগেই বলেছি ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালানো অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো, যেকোনো সময় যেকোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। নিরাপত্তা বজায় রাখলে যে সবরকম দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে তা না, তবে মারাত্মক কিছু ঘটা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে নিশ্চিতভাবে। নিরাপদ থাকার জন্যে কি কি দরকার এবং কি করণীয় তাই তুলে ধরা হবে এই পোস্টে।
হেলমেট:
সাইকেল হেলমেট
সাইকেল আরোহীদের জন্যে হেলমেট অত্যাবশ্যক। মাথার যেকোনো আঘাত এড়ানোর জন্যে হেলমেট পড়তেই হবে।  অনেকেই হয়তো লজ্জায় সাইকেলের সাথে হেলমেট যায়না ভেবে হেলমেট পড়াটা এড়িয়ে যান, আবার অনেকের ধারণা যে দুর্ঘটনার সময় সাইকেলের হেলমেট নিরাপত্তার জন্যে কোন ভূমিকাই রাখেনা, যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বেশির ভাগ মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে দারুণভাবে বাঁচিয়ে দিবে হেলমেট। দুর্ঘটনায় মাথা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগলে বা মাটিতে পড়ে গেলে সেটা সরাসরি মাথায় না লেগে হেলমেটে লাগবে, যার ফলে মাথা ফাটা বা তার চেয়েও মারাত্মক কিছু এড়ানো যাবে। তবে সাধারণ হেলমেট না কিনে কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও ব্র্যান্ডের হেলমেট কেনা উচিৎ। অবশ্যই সামান্য কিছু টাকার চেয়ে আমার নিরাপত্তাটা বেশি জরুরী।
হেলমেট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন মাথার মাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং পরিপূর্ণভাবে ফিট হয়।
গ্লভসঃ
যেকোনো বাইক দুর্ঘটনায় হাত, মাথা হাঁটু, কনুই এগুলোই সাধারণত আগে মাটিতে হিট করে, তাই এই জায়গাগুলোতেই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে পড়ে গেলে বা অন্য কোন কিছু হলে হাত মাটিতে পড়ে তালুর চামড়া ছড়ে যেতে পারে যা মারাত্মক কষ্টের, পাশাপাশি তা সেরে উঠতেও বেশ সময় নেয়। এছাড়া অন্য কোন ক্ষতিও হতে পারে। ভালো মানের গ্লভস সাইকেল আরোহীর হাতকে দারুণ ভাবে নিরাপদ রাখতে পারবে। ভালো গ্লভস আরোহীকে আরামদায়ক ও ভালো গ্রিপ দেওয়ার পাশাপাশি হাতকেও নিরাপদ রাখছে তাই সাইকেল আরোহীদের জন্যে গ্লভস ও অত্যাবশ্যক।
রাইডের আগে যেসব একটু নজর দিয়ে নিতে হবে:
১. চাকা ঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা আর সঠিকভাবে হাওয়া আছে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে।
২. ফর্কে কোন সমস্যা আছে কিনা আর সেটা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা সেটা দেখতে হবে।
৩. সামনে এবং পিছে দু’টো ব্রেকই ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে।
৪. রাতের বেলায় বের হলে সামনে আর পেছনে লাইট লাগিয়ে নেয়া উচিৎ।
৫.হ্যান্ডেলবার ঠিকঠাক-মতো লাগানো আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।
৬. প্যাডেল ঘুরিয়ে চেইনটাকেও ঠিকমতো দেখতে হবে।
৭. গিয়ার থাকলে গিয়ার শিফটার ঠিকঠাক-মতো কাজ করছে কিনা দেখে নেয়া উচিৎ।
৮. স্যাডেল বা সিট আপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চতায় এবং শক্ত ভাবে আছে কিনা দেখতে হবে।
৯. টায়ারে কোন প্রকার লিক আছে কিনা সেটা দেখে নেয়া উচিৎ।
১০. আলাদাভাবে টিউব নিয়ে নেয়া উচিৎ সেই সাথে টিউবের প্যাচ কিট ও।
১১. পাম্পার নিয়ে নেওয়া উচিৎ, সব থেকে ভালো হয় ছোট হ্যান্ড পাম্পারগুলো নিলে, সেগুলো পরিবহনেও সহজ।
১২ হেলমেট আর গ্লভস অবশ্যই পড়ে নিতে হবে।
১৩. সম্ভব হলে উজ্জ্বল রঙ পড়া উচিৎ যাতে করে সহজেই আশেপাশের চালকরা দেখতে পারে আপনাকে, রাতের বেলায় কালো রঙের কাপড় নাপড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
১৪. বাইক আরোহী শারীরিক ভাবে ফিট কিনা রাইডের জন্যে সেটাও দেখা উচিৎ।
১৫. রাইডের আগে খানিকটা চালিয়ে কোনরকম সমস্যা আছে কিনা দেখা উচিৎ।
রাস্তায় চলার সময় অত্যাবশ্যক নিয়মগুলো:
১. ব্যস্ত সড়কে চলার সময় গতি যথাসম্ভব কম আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আঙ্গুল ব্রেইকের কাছাকাছি রাখা উচিৎ যাতে যথাসময়ে ব্যবহার করা যায়। খুব বেশি গতিতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ ব্রেইক করতে হলে প্রথমে মোটামোটি ভাবে পেছনের ব্রেইক চেপে সামনের ব্রেইক মোটামোটি ভাবে চাপতে হবে যদি ব্রেইক একদম ঠিকঠাক থাকে। হঠাৎ ভালো স্পিডে থাকা অবস্থায় দুই হাত দিয়ে দু’টো ব্রেক একসাথে চেপে ধরলে উলটে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. রাস্তার যথাসম্ভব বাম পাশ দিয়ে চলতে হবে।
৩. বড় গাড়ি আশেপাশে থাকলে সেগুলো থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
৪. অভ্যস্ত না হলে ব্যস্ত রাস্তায় হাত ছেড়ে বাইক চালানো উচিৎ না, অভ্যস্ত থাকলেও হাত ছেড়ে না চালানোটাই উত্তম।
৫. কোনভাবেই চলন্ত অবস্থায় গান শোনা বা মোবাইলে কথা বলা যাবেনা
৬. এদিক ওদিক অকারণেই তাকানো যাবেনা এবং অন্য কোন দিকে চেয়ে সাইকেল চালানো উচিৎ না, এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৭.ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিৎ, যদিও বেশিরভাগ সাইকেল আরোহীই সেটা মানেন না। সবারই ধারণা সাইকেলের জন্যে কোন ট্রাফিক নিয়ম নেই, যখন খুশি যেভাবে খুশি চালানো যায়, তবুও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিৎ।
৮. পার্ক করা গাড়ির খুব কাছে দিয়ে যাওয়া যাবেনা, প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই গাড়ির গেইট খোলার আগে বাহিরে দেখে নেন না।
৯. গ্রুপ রাইডের ক্ষেত্রে লেন বজায় রেখে চলা উচিৎ আর যদি সম্ভব হয় পাশাপাশি কথাবার্তা এড়ানোটাই ভালো।
১০. প্রতিটা মোড় ঘোরার আগে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার এবং অপর পাশ থেকে গাড়ি বা অন্য কোন যান আসতে পারে সেটা ভেবে নিয়েই সাবধান থাকতে হবে।
১১. আমাদের দেশের রিকশাওয়ালারা সবচেয়ে বেপড়োয়াভাবে চালায়। অনেকেই ডানে বা বামে যাওয়ার কোন রকম লক্ষণ না দেখিয়েই চলন্ত অবস্থায় হঠাৎ রিকশা ডানে বা বামে চাপিয়ে নেন যার দরুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই এমন পরিস্থিতির জন্যে প্রস্তুত থাকা উচিৎ।
১২. রাস্তা পার হওয়ার সময় ডানে বা দেখে নেয়া দরকার।
১৩. চলন্ত অবস্থায় ডান-বামে যাওয়ার জন্যে হাত দেখিয়ে সতর্ক করুন।
১৪. রাস্তার মাঝে চলন্ত অবস্থায় আকস্মিক ব্রেইক করা বিপজ্জনক।
১৫. চলন্ত বাস, ট্রাক গাড়ির সাথে অনেকেই প্রতিযোগিতা শুরু করেন। এ জাতীয় প্রতিযোগিতা নিতান্তই অসুস্থ মন-মানসিকতার পরিচয়। বিশেষ করে যারা নতুন রাইডার তাদের মধ্যে এ বিষয়টি বেশি লক্ষণীয়, এগুলো পরিহার করতে হবে।
সাইকেল যদিও তুলনামূলক ভাবে অনেক নিরাপদ বাহন তবুও হেলায় কাজ করা উচিৎ না। সাইকেল চালানোর সময়েও যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে উচিৎ যাতে করে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না… নিরাপদে রাইড করুন।

নতুন সাইক্লিস্ট – আপনাকে যা জানতে হবে…

ইতোপূর্বে সাইক্লিং নিয়ে পিপীলিকায় বেশ কিছু লেখা পাবলিশ করা হয়েছে এবং প্রতিটি লেখাই আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছে। যার ফলে একই বিষয়ের উপর আরও নতুন এবং তথ্য নির্ভর লেখা দেয়ার আগ্রহ জেগেছে। সাইক্লিং বিষয় আমাদের এবারের পোস্ট থাকবে যারা নতুন সাইক্লিং শুরু করেছেন কিংবা করবেন অথবা যারা এখনো এ বিষয়ে অনেক কিছু সম্পর্কে অজ্ঞ আছেন। সঠিকভাবে বোঝানোর স্বার্থে লেখা দীর্ঘায়িত করা হয়েছে।

নতুন সাইক্লিস্টদের জন্যে অবশ্যপালনীয় কিছু বিষয় -

সাইক্লিং রোড
১.প্রথম কাজ সাইকেল চালানো শিখে নেয়া। চেনা পরিচিত কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে শিখতে পারেন নতুবা বিডিসাইক্লিস্টস এর বিগেনার লেসন এ অংশগ্রহণ করে সাইকেল চালানো এবং সাধারণ ধারণাগুলো নিয়ে নিতে পারেন। নতুন সাইক্লিং শুরু করে তাদের অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেনা আর সব কিছুর মতো সাইক্লিং এও যথেষ্ট রিস্ক রয়েছে। সাইকেলের সাথে সম্পূর্ণভাবে মানিয়ে না নেয়া পর্যন্ত পাগলামো করে খুব বেশি গতিতে কিংবা স্টান্ট করার চেষ্টা করা মারাত্মক ফলাফল এনে দিতে পারে। সাবধান থাকতে হবে। নিজের সাইকেলকে বোঝার জন্যে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
২.ঢাকার রাস্তায় সাইক্লিং করা অনেকটাই দুঃস্বপ্নের মতো। আপনি যদি সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকেন তারপরেও অন্যান্য ড্রাইভারদের অসাবধানতা-বসত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ ব্যবহার করতে হবে।
৩.নতুন নতুন সাইকেল চালানো শুরু করলে চারপাশে সব কিছুর সাথেই রেস করতে মন চাইবে, আর সেটাই স্বাভাবিক। পাখির ডানা গজালে নিশ্চয়ই পাখির বসে থাকতে ইচ্ছে করে না, দুই পাশে পাখা পেলে উড়তে ইচ্ছে করে। ঠিক তেমনই নতুন সাইকেল চালানো শিখলে খুব বেশি স্পিডে চালানো আর রেস করার প্রবণতা দেখা দেয়। নিজের এই ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে হবে। চাইলেও এই ইচ্ছা বাস্তবে রূপান্তর করা যাবেনা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এমন করে দুইবার অ্যাকসিডেন্ট করেছি।
৪.নতুন নতুন সাইক্লিং শুরু করলে শরীরের মাসলগুলোর জন্যে কিছুদিন সময় দরকার সেগুলো ফ্রি হওয়ার জন্যে। নিয়মিত জগিং, সাঁতার কিংবা জিম করলে সেক্ষেত্রে কথা ভিন্ন। কিন্তু সাধারণ কারো জন্যে নিজের শরীরের মাসলগুলোকে ফ্রি হয়ে নেওয়ার মতো সময় দিতে হবে। একদিন দুইদিনেই মাসল ফ্রি হয়ে যাবেনা। তাই প্রথমেই বড় বড় রাইড দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সাবলীলভাবে সাইকেল চালাতে হবে।
সাইকেল ক্র্যাশ
৫.দীর্ঘদিন সাইক্লিং করলে মস্তিষ্কের সাথে শরীর মানিয়ে নিতে পারে, ফলে যেকোনো চূড়ান্ত মুহূর্তে কি করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে সেটা ঠিক করে নিতে পারে। কিন্তু প্রথম দিকে শরীর এবং মস্তিষ্কের সমন্বয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন রকমের হয়। অনেক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে ওঠে না। তাই নিজেকে সাইক্লিং এ যথেষ্ট সময় দিতে হবে এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করতে হবে যাতে করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যেকোনো রকম দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

সাইকেল

ইতোমধ্যেই সাইকেল কিনে না ফেললে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাটা নিতান্তই স্বাভাবিক। চারিদিকে হরেক রকম সাইকেলের বাহার। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ সেটা তার গুণ দিয়ে না সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করবে যার সাইকেল সম্বন্ধে তেমন ধারণা নেই। দামী সাইকেলগুলো দেখে মনে হতেই পারে এগুলোর মধ্যে এমন কি আছে !
যদি ইতোমধ্যেই সাইকেল না কিনে থাকেন তাহলে আগে জানার চেষ্টা করুন কোন সাইকেল ভালো এবং কেন ভালো। বিডিসাইক্লিস্ট এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে চাইলে আপনার বাজেট উচ্চতা এবং চাহিদা জানিয়ে পোস্ট করতে পারেন। আশানুরূপ মতামত পেলে সিদ্ধান্ত নিন।
বাজেট সমস্যা না থাকলে কম দামী সাইকেল না কেনাই ভালো। যেসকল কারণে কমদামী সাইকেল কিনবেন না শিরোনামে আমাদের একটি পোস্ট আছে। সেটা পড়ে নিতে পারেন। তাহলে কম দামী সাইকেলগুলো না কেনার পিছের কারণগুলো জেনে নিতে পারবেন।

সাইক্লিস্ট এর জন্যে আবশ্যিক জিনিসগুলো

সাইক্লিং এর জন্যে সাইকেলতো আবশ্যিক জিনিস, এরপরেও আরও কিছু আবশ্যিক জিনিস আছে যেগুলো একজন সাইক্লিস্ট হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে। আবশ্যিক জিনিসগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া হলো।
সাইক্লিং এর শুরুতে যেগুলো অবশ্যই দরকার
হেলমেট
১.হেলমেট – সাইকেল আরোহীদের জন্যে হেলমেট অত্যাবশ্যক। মাথার যেকোনো আঘাত এড়ানোর জন্যে হেলমেট পড়তেই হবে। অনেকেই হয়তো লজ্জায় সাইকেলের সাথে হেলমেট যায়না ভেবে হেলমেট পড়াটা এড়িয়ে যান, আবার অনেকের ধারণা যে দুর্ঘটনার সময় সাইকেলের হেলমেট নিরাপত্তার জন্যে কোন ভূমিকাই রাখেনা, যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বেশির ভাগ মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে দারুণভাবে বাঁচিয়ে দিবে হেলমেট। দুর্ঘটনায় মাথা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগলে বা মাটিতে পড়ে গেলে সেটা সরাসরি মাথায় না লেগে হেলমেটে লাগবে, যার ফলে মাথা ফাটা বা তার চেয়েও মারাত্মক কিছু এড়ানো যাবে। তবে সাধারণ হেলমেট না কিনে কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও ব্র্যান্ডের হেলমেট কেনা উচিৎ। অবশ্যই সামান্য কিছু টাকার চেয়ে আমার নিরাপত্তাটা বেশি জরুরী। হেলমেট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন মাথার মাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং পরিপূর্ণভাবে ফিট হয়।
২.লক – দেশে সাম্প্রতিককালে সাইকেল চুরির ঘটনা অহরহ ঘটছে। বাড়ির গ্যারেজ থেকেও সাইকেল চুরি যেতে পারে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভালো লক দরকার। অনেক চাইনিজ লক পাওয়া যায় যেগুলো প্রফেশনাল সাইকেল চোরের কাছে খুলে ফেলা কোন কঠিন কাজ নয়। তাই নিজে ভালো মানের ছিকল কিনে, আনকমন বিদেশী তালা ব্যবহার করে সাইকেল লক করতে পারেন।
৩.পাম্পার – ভালো মানের সাইকেলে যদিও নিয়মিত পাম্প দেয়ার দরকার পরে না তবুও সাইকেল থাকলে পাম্পার সাথে রাখতেই হবে। মোটামোটি মানের একটা পাম্পার এর দাম খুব একটা বেশি না।
৪.বেল – অলি গলিতে চলাচল করতে গেলে আর রাস্তায় অন্য ড্রাইভারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে সাইকেল এর সাথে বেল থাকাটা আবশ্যিক।
৫.প্যাচ কিট – যেকোনো সময় সাইকেল এর টিউব লিক হয়ে যাওয়া কিংবা ফেটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে প্যাচ কিট সাথে থাকলে নিজেই যেকোনো সময় সাড়িয়ে নেয়া সম্ভব।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যেগুলো কিনে নিতে পারেন (ঐচ্ছিক)
১.গ্লভস – যেকোনো বাইক দুর্ঘটনায় হাত, মাথা হাঁটু, কনুই এগুলোই সাধারণত আগে মাটিতে হিট করে, তাই এই জায়গাগুলোতেই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে পড়ে গেলে বা অন্য কোন কিছু হলে হাত মাটিতে পড়ে তালুর চামড়া ছড়ে যেতে পারে যা মারাত্মক কষ্টের, পাশাপাশি তা সেরে উঠতেও বেশ সময় নেয়। এছাড়া অন্য কোন ক্ষতিও হতে পারে। ভালো মানের গ্লভস সাইকেল আরোহীর হাতকে দারুণ ভাবে নিরাপদ রাখতে পারবে। ভালো গ্লভস আরোহীকে আরামদায়ক ও ভালো গ্রিপ দেওয়ার পাশাপাশি হাতকেও নিরাপদ রাখছে তাই সাইকেল আরোহীদের জন্যে গ্লভস ও অত্যাবশ্যক।
২.লাইট – সামনে ও পিছে ব্যবহার করার জন্যে লাইট কিনে নিতে পারেন যদি নাইট রাইডে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে। ফ্রন্ট ও টেল লাইট ছাড়া কখনোই রাতের রাস্তায় সাইক্লিং করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
৩.প্যাডেড শর্টস – নিয়মিত সাইক্লিং করলে সিট পোস্টের কারণে জায়গা মতো ( :wink: ) ব্যথা হতেই পারে। তাই প্যাডেড শর্টস থাকাটা জরুরী।
৪.বাইক কম্পিউটার – স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হলে এণ্ডোমোন্ডোর মতো স্পোর্টস ট্র্যাকার দিয়ে সহজেই ট্র্যাক করতে পারবেন আপনার মোট দূরত্ব, সর্বোচ্চ স্পিড, এভারেজ স্পিড ইত্যাদি। কিন্তু যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্যে বাইক কম্পিউটার সেই আশা পূরণ করবে।
৫. হাইড্রেশন প্যাক – সাইক্লিং করলে প্রচুর পরিমাণে তরল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তাই প্রচুর পানি পান করে শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে বাঁচাতে হয়। সেক্ষেত্রে হাইড্রেশন প্যাক থাকাটা জরুরী।
এছাড়া শখের জন্যে আরও অনেক কিছুই কিনে নিতে পারেন, যেমন ভালো জুতো, ড্রেস, সাইকেল র‍্যাক ইত্যাদি।

শেষ কথা 

লেখা সম্পর্কে ভালোলাগা মন্দ লাগা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না আর কোন বিষয়ের উপর লেখা চাইলে সেটাও জানাতে পারেন আমরা যতদ্রুত সম্ভব সেই বিষয়ে নতুন লেখা তৈরি করে ফেলবো।

সাইক্লিং – এন্ডোমোন্ডো দিয়ে ট্র্যাক করুন আপনার গতিবিধি

সাইক্লিং

স্মার্টফোনগুলোর জন্যে বাজারে যেসব স্পোর্টস ট্র্যাকিং অ্যাপলিকেশন আছে তার মধ্যে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে এন্ডোমোন্ডো। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ ফোন, ব্ল্যাকবেরি, সিম্বিয়ানসহ স্মার্টফোনের প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেমেই এন্ডোমোন্ডো ব্যবহার করা যাবে। বহির্বিশ্বে সাইক্লিং, দৌড়, হাঁটা, স্কেটিং, সাঁতারসহ নানা খেলাধুলা ট্র্যাক করার জন্যে ব্যবহার করা হয় এন্ডোমোন্ডো স্পোর্টস ট্র্যাকার। বিডিসাইক্লিস্টসসহ দেশের আরো কিছু সাইক্লিং গ্রুপের সুবাদে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে সাইক্লিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর প্রযুক্তির সুবাদে  নিত্য-নতুন  সুবিধা-সমৃদ্ধ স্মার্টফোনও বাজারে আসছে।

স্বাভাবিকভাবেই যদি কোন স্মার্টফোনধারী সাইক্লিং করেন তাহলে তিনি তার গতিবিধি ট্র্যাক করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। আর এমনটা হচ্ছেও অহরহ, অনেকেই শুধু তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্যেই স্বল্পমুল্যেই স্মার্টফোনগুলো নিজের সংগ্রহে রাখছেন। ইতোপূর্বেই সাইক্লিং নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পোস্ট রয়েছে এই ব্লগে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এন্ডোমোন্ডো স্পোর্টস ট্র্যাকার ব্যবহার করে গতিবিধি ট্র্যাক করার পদ্ধতি তুলে ধরা হবে।

আমি কিভাবে বুঝবো আমার ফোনে এন্ডোমোন্ডো চলবে কিনা?


এন্ডোমোন্ডো চালানোর জন্যে প্রথমেই দরকার পড়বে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ ফোন, ব্ল্যাকবেরি, সিম্বিয়ানসহ স্মার্টফোন। আর স্মার্টফোন যদি থেকে থাকে তাহলে দেখে নিতে হবে আপনার ফোনটি জিপিএস সম্বলিত কিনা। ফোনে জিপিএস না থাকলে আপনি কখনোই এন্ডোমোন্ডো ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ এন্ডোমোন্ডো ব্যবহার করার জন্যে আপনার একটি জিপিএস সম্বলিত স্মার্টফোন থাকা আবশ্যক।

এন্ডোমোন্ডো কোথায় পাবো?


এন্ডোমোন্ডো স্পোর্টস ট্র্যাকার এর মোট দু’টি ভার্শন। এর একটি ফ্রি, অপরটি পেইড। মোটামোটি যেসকল সুবিধা দরকার পরে তার সবগুলোই মিটে যাবে ফ্রি ভার্শন দিয়ে। তবে আপনি চাইলে মাত্র $3.95 এর বিনিময়ে আরো কিছু দারুণ সুবিধা নিয়ে নিতে পারেন পেইড ভার্শনটি কিনে নিয়ে।  নিচের লিঙ্কগুলো থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত অপারেটিং সিস্টেমের জন্যে এন্ডোমোন্ডো ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
আইওএস এর জন্যে ফ্রি ভার্শন (আইফোনসহ একই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ অন্যান্য ডিভাইস)

এন্ডোমোন্ডো ব্যবহারবিধি


হয়তো অনেকেই ইতোমধ্যে এন্ডোমোন্ডো ব্যবহার করেন, এই পোস্টে শুধুমাত্র যারা নতুন কিংবা যারা ইতোমধ্যে ব্যবহার করেননি কিন্ত ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানতে চান তাদের উপযোগী করে লেখা হয়েছে। ধাপে ধাপে এন্ডোমোন্ডো এর ব্যবহার বিধি তুলে ধরা হলো:
(উদাহরণ হিসবে এখানে অ্যান্ড্রয়েড এ ব্যবহারবিধি দেখানো হবে)
১. প্রথমেই প্লে স্টোর থেকে এন্ডোমোন্ডো স্পোর্টস ট্র্যাকার ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে।

এন্ডোমোন্ডো ডাউনলোড


২.ডাউনলোড হয়ে গেলে এবার নিচের চিত্রের মতো করে আপনার মোবাইলের জিপিএস চালু করে নিন। সবারক্ষেত্রে স্ট্যাটাসবারে জিপিএস চালু করার অপশন নাও থাকতে পারে, সেক্ষত্রে ভেতরে মেন্যু থেকে সেটিংস এ গিয়ে চালু করে নিতে হবে। একইসাথে ইন্টারনেট কানেকশন চালু করে নিতে হবে। ইন্টারনেট কানেকশন চালু করা বাধ্যতামূলক। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যে এর দরকার পড়বে।

এন্ডোমোন্ডো (1)

৩. এবার মেন্যুতে গিয়ে এন্ডোমোন্ডো অ্যাপটি খুজে বের করে চালু করতে হবে।

এন্ডোমোন্ডো (3)

৪.এন্ডোমোন্ডো স্পোর্টস ট্র্যাকার চালু হয়ে গেলে প্রথমেই লগ ইন করতে বলবে। চাইলেই Remind Me Later এ প্রেস করে এটাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে। তবে এতে করে পরবর্তীতে আপনার ট্র্যাক করা জিনিসগুলো নেটে আপ করতে লগইন করতে হবে। তার চেয়ে প্রথমবারেই লগইন করে নেয়া ভালো। ইতোমধ্যেই Endomondo.com এ রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন এবং সেই ইনফো অ্যাপস এ দিতে পারেন কিংবা ফেইসবুক একাউন্ট দিয়েও লগ ইন করতে পারেন।

এন্ডোমোন্ডো (5)

৫.লগ ইন করা হয়ে গেলে আপনাকে নিচের ছবির মতো করে স্বাগতম জানানো হবে। Done প্রেস করুন। এরপর টার্মস এন্ড কন্ডিশনস দেখানো হবে। নির্দ্বিধায় I Accept এ প্রেস করুন। ভাববেন না, আপনি জমি-জমা লিখে নেয়া হচ্ছে না

:wink:
এন্ডোমোন্ডো (8)এন্ডোমোন্ডো (7)


৬.এবার নিচের ছবির মতো করে ছোট্ট একটা উইন্ডো ওপেন হবে, সেখানে বলা হবে টিটিএস ডাটা ডাউনলোড করতে। ওকে প্রেস করলে ডাউনলোড শুরু হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে টিটিএস ডাটা ডাউনলোড হয়ে গেলে এন্ডোমোন্ডোর প্রতিটি কমাণ্ডে তা শব্দের মাধ্যমে ভার্চুয়াল কণ্ঠ জানিয়ে দিবে। এটা না ডাউনলোড করলেও কোন সমস্যা নেই। অনেকের ক্ষেত্রে নিচের মতো কিছু নাও আসতে পারে। এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই, ম্যানুয়ালি পরে ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।

এন্ডোমোন্ডো (9)

৭.এবার নিচের চিত্রে গোল দাগ দিয়ে দেখানো স্থানে প্রেস করে সাইক্লিং ট্রান্সপোর্ট সিলেক্ট করে নিতে হবে যদি সাইক্লিং করেন। এছাড়াও আরো অনেক খেলাধুলা ট্র্যাক করা যাবে এন্ডোমোন্ডো দিয়ে। তবে কিছু কিছু আবার ম্যানুয়ালি ইনপুট করে দিতে হবে। সাইক্লিং এর ক্ষেত্রে শুধু সাইক্লিং নির্বাচন করলেই কেল্লা ফতে, আর কিছু লাগবেনা।

এন্ডোমোন্ডো (4)

৮. এবার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ যাতে করে অ্যাপলিকেশনটি জিপিএস ব্যবহার করে আপনার অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। নিচের ছবির মতো করে “GPS Excillent” কিংবা “GPS Moderate” দেখা গেলে মোটামোটি নিশ্চিতভাবে দরে নিন যে এন্ডোমোন্ডো আপনার লোকেশন নিশ্চিত করতে পেরেছে। 

এন্ডোমোন্ডো (2)

৯. উপরের ছবিতে GPS Excillent দেখা যাচ্ছে। এবার এন্ডোমোন্ডো তৈরী এর কার্যকারিতা দেখানোর জন্যে। প্লে বাটনের মতো বাটনটাতে প্রেস করলে এন্ডোমোন্ডো চালু হয়ে যাবে, এরপর সেখানে লাল রঙের স্টপ বাটন থাকবে, সেটাতে ক্লিক করলে বন্ধ হয়ে যাবে, পাশে পস করার বাটনও থাকবে। আর 10 লেখা বাটনে ক্লিক করলে কাউন্ট ডাউন শুরু হবে। দশ সেকেন্ড পর এন্ডোমোন্ডো চালু হবে।:)

বিশেষ দ্রষ্টব্য

উল্লেখ্য অনেকের ধারণা এন্ডোমোন্ডো চালাতে ইন্টারনেট কানেকশন থাকা বাধ্যতামূলক। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রথমবার নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্যে ইন্টারনেট কানেকশন দরকার। এরপর শুধু ডাটা নেটে আপ করার জন্যে কানেকশন দরকার পড়বে। অর্থাৎ এন্ডোমোন্ডো চালু করে এর সব সুযো-সুবিধা ভোগ করা যাবে কোন ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই। শুধু জিপিএস চালু থাকলেই চলবে।
ধরা যাক আপনি কোন রাইডে বের হবেন, সেক্ষেত্রে জিপিএস চালু করে এন্ডোমোন্ডো চালু করে আপনার সম্পূর্ণ রাইড ট্র্যাক করুন, এরপর রাইড শেষে খানিকটা সময়ের জন্যে ইন্টারনেট চালু করে এন্ডোমোন্ডো চালু করলে নিজে থেকেই সব ডাটা আপ করে দিবে নেটে। যাদের নেট কানেকশন নেই বা নিতে ইচ্ছুক না তারা চাইলে ওয়াইফাই ফ্রি জোন এ গিয়েও ডাটা আপ করতে পারেন।

শেষ কথা 

লেখার বিষয়ে সবার মন্তব্য আশা করছি। ভালো লাগা মন্দ লাগা জানাতে ভুলবেন না যেনো। লেখায় ভুল ভ্রান্তি থাকলে নির্দ্বিধায় তা তুলে ধরুন।:)যেকোনো রকম মতামত কাম্য।

Comment